ইসলামে হতাশা, কষ্ট, দুঃখ, অসুবিধা ও দুর্দশা দূর করার উপায় ও মোটিভেশন

জীবন চলার পথে, আমরা এমন অনেক সময় পার করি যখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়। নিজের জীবনকে নিয়ে আমরা খুশি থাকি না, নিজের জীবনকে নিয়ে আমরা ব্যথিত হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামিন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এই লাইফ, এই জীবন পরিচালনা করার জন্য বলেননি এবং আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেননি।

আজ আমরা কুরআন থেকে এমন চারটি শব্দ ও এমন চারটি বিষয় সম্পর্কে জানব যেখানে আল্লাহ তাআলা রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবন চলার পথের এই সকল দুঃখ দুর্দশা কে দূর করার উপায় এবং মোটিভেশন দিয়েছেন।
  1. লা তাহযান
  2. লা তাখফ
  3. লা তাগদব
  4. লা তাসখত
১. লা তাহযান অর্থাৎ তোমরা চিন্তিত না হতাশা গ্রস্থ হয়ো না। জীবনে যখনই কোন দুঃখ, দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা চলে আসবে তখন দুশ্চিন্তা করা যাবেনা, হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। বরং তখন আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীন এর উপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ তা'আলা যা করেন, যা করবেন সবকিছুই হবে শুধুমাত্র আমাদের ভালোর জন্য। সেটা হবে আমাদের কল্যাণকর ও অমঙ্গলকর জীবন গঠনের জন্য।

২. লা তাখফ অর্থাৎ ভয় পেয়ো না। যখনই তোমরা এমন কোন সিচুয়েশনে বা এমন কোন অবস্থায় পড়ে যাবে যে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিজের উপর ভরসা রাখতে পারবে না, মনে হবে যে এইতো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি, এই তো আমি আর পারছিনা। এরকম অবস্থায় কখনোই ভয় পাওয়া যাবে না। তখন আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীন এর উপর আশা ভরসা রাখতে হবে। কারণ তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি আমাদেরকে এই ভয়-ভীতি কষ্ট দুঃখ দুর্দশা থেকে রক্ষা করবেন। কারণ আমরা নিজেদেরকে যতটুকু ভালোবাসি, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার চেয়েও অনেক অনেক অনেক গুণ বেশি ভালোবাসেন। আমাদের নিজেদের যে ভালবাসা সেটা দিয়ে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে না পারলেও, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদেরকে রক্ষা করবেন এবং আমাদের জীবনের ভালো কিছু দান করবেন। এজন্য কোনো অবস্থাতেই ভয় পাওয়া যাবে না বরং সর্বদাই আশা এবং ভরসা রাখতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীন এর উপর।

৩. লা তাগদব অর্থাৎ কখনোই রাগান্বিত হইয়ো না। আমরা সামাজিক জীব। মানুষ কখনোই একা চলতে পারে না, চলার পথে বহু মানুষ ও জাতির সাথে আমাদেরকে মিশতে হয়। তাই কারো ব্যবহারে কখনোই রাগান্বিত হওয়া যাবে না। কেউ যদি এমন কোন কাজ করে যেটাতে নিজের স্বার্থে লাগে অথবা যেটাতে কষ্ট পাওয়া যায় এরকম কোন কাজে রাগান্বিত হওয়া যাবেনা। বরং নিজেকে সংবরণ করতে হবে নিজেকে দমিয়ে রাখতে হবে। কারণ রাগ করা অহংকার করা এটা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীনের জন্য। আমাদের কাজ হল আমরা মানুষকে ক্ষমা করে দেব যদি তারা আমাদেরকে কোন কষ্ট দেয়।




৪. লা তাসখত অর্থাৎ কখনোই আল্লাহতালা রব্বুল আলামীনের কোনো সিদ্ধান্তের উপর অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। আমরা জীবনে এমন অনেক সময় পার করি যখন মনে হয় যে আমাদের সাথে এই ঘটনা ঘটল কেন? 
আমাকে আল্লাহতালা রব্বুল আলামিন দেখলেন? 
অন্য কাউকে কি আল্লাহ তাআলা এটা দিতে পারতেন না? 
আমার জন্য কি ভালো কিছু রাখতে পারতেন না?
এরকম চিন্তাগুলো আমাদের মাথায় চলে আসে। কিন্তু কখনই এই চিন্তাগুলোকে আনা যাবে না, কারণ আজকে আমাদের কাছে যেটা ভুল মনে হচ্ছে যেটাকে কষ্টদায়ক মনে হচ্ছে পরক্ষণেই সেটা আমাদের জন্য ভাল কিছু হয়ে যেতে পারে। কারণ আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীন কুরআনে বলেছেন যে, কোনটা আমাদের জন্য ভালো এবং কোনটা আমাদের জন্য খারাপ সেটা আমরা নিজেরা বুঝতে পারিনা। আজকে আমাদের জন্য যেটাকে খারাপ মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে সেটা আমাদের জন্য ভাল কিছুতে পরিণত হতে পারে।

সে জন্য আল্লাহ তাআলা যখন আমাদের সাথে যেটা ঘটাবেন। যে সিদ্ধান্ত আমাদের সাথে হবে, সেটাতে কখনো রাগান্বিত হওয়া যাবে না ও কখনো অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না।  সন্তুষ্ট থেকেই আল্লাহতালা রব্বুল আলামীনের প্রতি নিজের ভরসা রাখতে হবে। কারণ আমাদের জীবন হলো আশা এবং ভয়-ভীতির মাঝখানে। আল্লাহতালার কাছে আশা করব, তার রাগ এবং তার শাস্তিকে আমরা ভয় করব। এভাবেই আমাদের জীবনকে আমরা পরিচালিত করব। কখনোই আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না।

ইসলামে হতাশা, কষ্ট, দুঃখ, অসুবিধা ও দুর্দশা দূর করার উপায়  ও মোটিভেশন

 

লেখক,
প্রিন্সিপাল, ব্রেইনারি ডিজিটাল মাদ্রাসা
Previous Post Next Post

Ads