সন্তানের হক || জন্ম থকে মৃত্যু পর্যন্ত পিতা-মাতার কাছে সন্তানের হক ও অধিকার

  পিতামাতার কাছে সন্তানের অধিকার



সন্তানের হক
পিতা-মাতার কাছে সন্তানের হক



আল্লাহ তাআলা মানুষের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন। আর এই সম্পর্কের মাঝে আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সন্তান। যাদের এই নেয়ামত মেলেনি তারা জানেন এর মূল্য কত। কিন্তু এই জন্ম দানের মাধ্যমেই এর শুকরিয়া ও দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর উপর অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে না করতে পারলে, তাদের সন্তান একজন আদর্শবান মানুষ হয়ে উঠবে না। আর এর জিম্মাদির উঠবে পিতা-মাতার কাধে । কেননা হাদিসে রয়েছে  "প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহূদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে।" [সহীহ বুখারী: ১৩৫৮]

তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের এই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী। আর আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
মনোযোগ দিয়ে প্রবন্ধটি পড়ুন ও সবার উপকারার্থে শেয়ার করুন।

সন্তান জন্মের পূর্ব থেকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত বাবা-মায়ের দায়িত্ব রয়েছে৷

সন্তান জন্মের পূর্বে দায়িত্ব
একজন সন্তান পৃথিবীতে আসার আগ থেকেই বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হয়, তার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়, আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করতে হয়৷ যেন আগত সন্তান সঠিক,সুন্দর ও উত্তম ফিতরত নিয়ে আগমন করে৷
তাই তো আল্লাহ নিজে আমাদেরকে করণীয় বলে দিয়েছেন আর দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন৷
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ
উচ্চারণ : রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিইয়াতিনা কুররাতা আইইনিও ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমামা।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদিগকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণ হতে নয়নের তৃপ্তি দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।
-সূরা আল ফুরকান, আয়াতঃ ৭৪

এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নেক সন্তান কামনা করা পিতা-মাতার দায়িত্ব ৷

সন্তানের জন্য বাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল, সে তার সন্তানের জন্য একজন উত্তম,সতী,নম্র,পরহেজগার মা বাছাই করবে৷ তথা বাবা একজন আল্লাহভীরু,পর্দাশীল মেয়ে বিবাহ করবে ৷ যাতে তার গর্ভ থেকে আল্লাহভীরু সন্তানের জন্ম হয়৷
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, সন্তানের প্রতি বাবার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব:
১৷ উত্তম মা ব্যবস্থা করা ৷
২৷ উত্তম নাম রাখা ৷
৩৷ আল্লাহর কালাম (কুরআন) শিক্ষা দেওয়া ৷

সন্তান মায়ের পেটে আসার পর পিতা-মাতার দায়িত্ব:
সন্তান গর্ভাবস্থায় পিতা-মাতা বিশেষ করে মায়ের দায়িত্ব অতিরিক্ত ইবাদত করতে না পারলেও গোনাহ ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করা৷ মায়ের ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই এটা করতেই হবে, । যেমন, নাটক-সিরিয়ালপ্রীতি বর্জন করা, কণ্ঠস্বরকে সংযত করা, বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘর হতে বের না হওয়া। যে সকল গায়রে মাহরাম আত্মীয় রয়েছে, তাদের সাথে দেখা সাক্ষাতের কম করা বা পর্দা লংঘন না করা। পাশাপাশি সময় মত নামাজ আদায় করা,আল্লাহর শোকর আদায় করা, অযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা, কোরআন ও জিকির করার চেষ্টা করা, ধৈর্য ধারন করা এবং বেশি বেশি দোয়া করা৷ যাতে আল্লাহ নেক সন্তান দান করেন৷

সন্তান জন্ম গ্রহনের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়৷ তাদের জীবনের পাশাপাশি সন্তানকেও শারীরিক ও মানসিক ভাবে আল্লাহর অনুগত করে তোলা অপরিহার্য৷ তাই যে কাজগুলো সঠিক ভাবে করতে হয়৷ তা নিম্নরূপ :

কানে আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে তার ডান কানে আযান দেয়া। শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া পিতা-মাতার প্রথম কর্তব্য যাতে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে না পারে। হাদিসে শরীফে রয়েছে,
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ - حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ - بِالصَّلاَةِ
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ (রাঃ) যখন ‘আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কানে সলাতের আযানের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন৷ [সুনান আবূ দাউদ:৫১০৫]

সুন্দর নাম রাখা: জন্মের পর সন্তানের সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা পিতা-মাতার অপরিহার্য কর্তব্য৷ কেননা কেয়ামতের আল্লাহ মানুষকে নিজের নাম ও তাদের পিতার নামে সম্বোধন করবেন৷ এছাড়াও বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।” [আবু দাউদ ৪৯৫২-৪৯৬১]

আক্বিকা করা : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সুন্নাত হলো সন্তানের আকীকা করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সকল নবজাতক তার আক্বিকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে।” [সুনান আবূ দাউদ: ২৮৩৮]

তাহনীক করা:  সন্তান জন্মের পর কোন নেক আল্লাহ ওয়ালা মানুষের মাধ্যমে সন্তানের মুখে মিষ্টি জাতিয় কোন খাবার দেওয়া।
أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَوَضَعْتُهُ فِيْ حَجْرِهِ ثُمَّ دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا ثُمَّ تَفَلَ فِيْ فِيْهِ فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيْقُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ وَبَرَّكَ عَلَيْهِ
আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে আবদুল্লাহকে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর চিবিয়ে তার মুখে থুথু দিলেন। সুতরাং সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আবদুল্লাহর পেটে গেল তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য চিবান খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দু’আ করলেন এবং বরকত চাইলেন। [সহীহ বুখারী: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬]


সদকাহ করা: ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত।

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ ‏ "‏ يَا فَاطِمَةُ احْلِقِي رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِي بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً 
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা. আকীকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা ! তার মাথা নেড়া কর এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ কর।” [সুনান আত-তিরমিযী: ১৫১৯]

তাওহীদ শিক্ষা দেয়া: সন্তান যখনই কথা বলতে আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওহীদ শিক্ষা দেওয়া শুরু করতে হবে।

 يَا غُلاَمُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন: “হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ্ তা'আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তা'আলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা'আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ্ তা'আলার নিকটেই কর। আর জেনে রাখো, যদি সকল উন্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা'আলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তা'আলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযী: ২৫১৬]

কুরআন শিক্ষা দান: ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরয। কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই।

عَنْ عُثْمَانَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত: নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়। [সহীহ বুখারী:৫০২৭]

খাতনা করা: ছেলে সন্তানদের খাতনা করানো রাসূল (সা.)-এর একটি অন্যতম সুন্নাত। “জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিনে আকীকা ও খাতনা করিয়েছিলেন। [আল-মু‘জামুল আওসাত: ৬৭০৮]


দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ও সলাত শিক্ষা দেয়া এবং সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করা: সন্তানকে ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দেয়া ফরজ। কারণ দ্বীনি ইলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদীসে এসেছে

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয। [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪]

সন্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা-মাতা তার সন্তানকে সলাত শিক্ষা দিবেন এবং সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। হাদীসে এসেছে:

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ‏
আমর ইবনে শূয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সলাতের জন্য মৃদু প্রহার কর এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো।” [সুনান আবূ দাউদ: ৪৯৫]

আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া: সন্তানদেরকে স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে।

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَبَّلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ جَالِسًا‏.‏ فَقَالَ الأَقْرَعُ إِنَّ لِي عَشَرَةً مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا‏.‏ فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ ‏ "‏ مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুমু দিয়ে আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন আমারতো দশটি সন্তান কিন্তু আমি কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর আদর করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্য কারো প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না।” [সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭]

সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা: সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

قَالَ فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ
“তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করো।” [সহীহ বুখারী: ২৫৮৭]


প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা: সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي مِنْ أَجْرٍ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هَكَذَا وَهَكَذَا، إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ‏.‏ قَالَ ‏ "‏ نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ
উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সালামাহর সন্তানদের জন্য ব্যয় করলে তাতে আমার কোন সাওয়াব হবে কি? আমি তাদের এ (অভাবী) অবস্থায় ত্যাগ করতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেনঃ হাঁ, তুমি তাদের জন্য যা খরচ করবে তাতে তোমার সাওয়াব আছে।” [সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯]

সক্ষম করে তোলা: সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন:

إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ
“তোমার ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদেরকে খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।” [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

বিবাহ দেয়া: সুন্নাহ অনুযায়ী বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর সমস্ত কাজ সম্পাদন করা এবং সঠিক সময়ে বিবাহর ব্যবস্থা করা পিতা-মাতার খুব বড় দায়িত্ব। কেননা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে: “নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে।” [জামিউল কাবীর]

ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা: সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাই ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কুরআনে এসেছে:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ
“হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” [সূরা আত-তাহরীম-৬]
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا الَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ
“কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।” [সূরা হা-মীম আসসিজদাহ-২৯]
আল্লাহ বলেন:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ وَ اَوۡلَادِکُمۡ عَدُوًّا لَّکُمۡ فَاحۡذَرُوۡہُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَعۡفُوۡا وَ تَصۡفَحُوۡا وَ تَغۡفِرُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের স্ত্রী-স্বামী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু; অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থেকো। আর যদি তোমরা তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা তাগাবুন-১৪]

হাদীসে এসেছে, ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধরে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধরে।” [সহীহ বুখারী:৫৮৮৫]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।” [সুনান আবূ দাউদ:৪০৩১]
সম্মানিত পিতামাতাগণ, আপনারা কি আপনাদের এই দ্বায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন বা পারছেন? চলুন নিজের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে হলেও সন্তানদেরকে নেক সন্তান হিসাবে তৈরি করি। কারণ এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-
১. সদকায়ে জারিয়া
২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে” [সহিহ মুসলিম:১৬৩১]

আল্লাহ তাআলা সকল মাতা-পিতা ও তাদের সন্তানদেরকে আল্লাহভীরু হিসেবে কবুল করুন, আমীন।

Previous Post Next Post

Ads